♦ অভিযানের দুই দিন পরই ফের চালু ভাটা
♦ পাহাড় কেটে আনা হচ্ছে মাটি, পোড়ানো হচ্ছে বনের কাঠ
♦ ভাটাটি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না নিয়ে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে -মাহবুবুল ইসলাম, পরিদর্শক, পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার
নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের উচিতারবিল মৌজায় বন্য হাতির অভয়ারণ্য ধ্বংস করে চলছে ইটখোলা। জিএলবি নামের এই ভাটার মালিক পাহাড় কেটে আনছেন ইট তৈরির মাটি। পোড়াচ্ছেন বনের কাঠ। এমন খবরে পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে ভাটার চুলা গুঁড়িয়ে দেওয়ার দুই দিন পরই ফের চালু করা হয়েছে ইট তৈরির কার্যক্রম।
গত দুই মার্চ পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযানের সময় ভাটাটি চালু না করতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়ার পরও এর কার্যক্রম ফের শুরু করায় হতবাক এলাকাবাসী। ভাটার মালিক চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ফের ভাটাটি চালু করেছেন। একই সঙ্গে নতুন করে শুরু করেছেন পাহাড় কাটা। এমন অভিযোগ তুলে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের অসংখ্য মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাটা চালুর ভিডিও চিত্র পোস্ট করে প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
অভিযানের পর নতুন করে ইটখোলার কার্যক্রম চালু এবং ভাটার দক্ষিণ-পূর্বাংশের বিশাল পাহাড় সাবাড় করে ফেলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন হেলালী। তিনি বলেন, ‘সর্বশেষ গত বুধবার এই অবৈধ ইটখোলার কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে পরিবেশ অধিদপ্তর সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে। তবে অভিযানের সময় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকায় শুধু চুলাসহ বিভিন্ন স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
এ সময় পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এই ভাটার মালিক গিয়াস উদ্দিন এবং ম্যানেজার অনুপ রুদ্রকে কঠোর নির্দেশনা দিয়ে অভিযান শেষ করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাঈদা পারভীন, কিন্তু সেই অভিযানের দুই দিন না পেরোতেই ফের ভাটার কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। পাশাপাশি বেপরোয়াভাবে কাটা হচ্ছে ভাটার দক্ষিণ-পূর্বাংশের বিশাল পাহাড়ও। এসব বিষয় পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে। ’
চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন হেলালী আরো বলেন, ‘সংরক্ষিত বনের উচিতারবিল মৌজাটি ছিল বন্য হাতির অভয়ারণ্য। ২০১০ সালের দিকে সেই অভয়ারণ্য ধ্বংস করে সেখানে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়—এই ইটখোলা। যখন এই ভাটা তৈরি করা হচ্ছিল, তখন সেখানে অন্তত অর্ধশতাধিক বড় বড় পাহাড় ছিল। সেসব পাহাড় কেটে সমতল ভূমিতে রূপান্তর করে ফেলেন ইটখোলার মালিক। ’
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের তৎকালীন রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহমুদ কবির (বর্তমানে অবসরে) বলেন, ‘ওই ইটখোলাসংলগ্ন এলাকায় বন্য হাতির অভয়ারণ্য গড়ে তোলার জন্য একটি প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সেই অভয়ারণ্য ধ্বংস করাসহ পাহাড় কেটে চলছেন। এ ঘটনায় তৎকালীন সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মাসুদ রানা বাদী হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। সেই মামলায় গিয়াসকে ছয় মাসের কারাদণ্ড হয়। ’
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের বর্তমান রেঞ্জ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘জিএলবি ইটখোলার কার্যক্রম নতুন করে শুরু করাসহ পাহাড় কাটার বিষয়টি জানতে পেরেছি। এই ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। ’
জিএলবি ইটখোলার মালিক চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী দাবি করেন, তাঁর এই ভাটা পরিচালনায় জেলা প্রশাসনের অনুমোদন রয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিদর্শক মাহবুবুল ইসলাম বলেন, ‘এই ভাটাটি পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়া এবং জেলা প্রশাসনের অনুমোদন না নিয়েই অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। ’ পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের উপপরিচালক শেখ নাজমুল হুদা বলেন, ‘ফের ভাটা চালুর বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ’
পাঠকের মতামত: